সকালে হাঁটার উপকারিতা জেনে নিন।
ছবিঃসকালে হাঁটার উপকারিতা |
সকালে হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে আপনিও হাঁটবেন। প্রতিদিন সকালে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট টানা হাঁটার অভ্যাস আছে অনেকেরই।
আর যাদের এই অভ্যাস নেই তাদেরও এই অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। কারণ প্রতিদিন সকালে মাত্র ২০-৩০ মিনিটের এই হাঁটা সারা দিন ভালো কাটাতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই নিয়মিত আলো-বাতাস পূর্ণ যায়গায় আধা ঘণ্টা করে হেঁটে নিন।
প্রতিদিন হাঁটতে যাওয়ার আগে লক্ষ্য রাখুন আপনার পোশাকটি যথেষ্ট আরামদায়ক এবং হাঁটার উপযোগী কিনা। হাঁটার আগে একটু ঢিলে ঢালা পোশাক পরে নিন। হাঁটার জন্য আরামদায়ক জুতো কিনে নিন। সঙ্গে অবশ্যই খাবার পানি রাখুন। প্রতি ১৫ মিনিট পর পর পানি খান অল্প করে। তাহলে সকালের হাঁটার অভ্যাসটা উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
সকালের হালকা ব্যায়াম সারাদিন চলবে উৎফুল্লেঃ
জীবনকে সফল ও উপভোগ্য করতে এবং সর্বোপরি কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পেতে ফিটনেস ধরে রাখতে হবে। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মনও থাকে প্রফুল্ল। মনকে প্রফুল্ল রাখতে এবং কাজে দ্বিগুণ মনোযোগী হতে সকালের ব্যায়ামের বিকল্প নেই। শরীরে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতেও সকালের ব্যায়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। কালবেলার শরীরচর্চায় সারাদিনের জন্য শরীর ফিট থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, কর্মক্ষম আর ঝরঝরে মন নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এই শহরে সতেজ বাতাসে শ্বাস নিতে চাইলে ভোরবেলা মোক্ষম সময়। সারাদিনের শত কর্মব্যস্ততার ভিড়ে নিজের জন্য সময় কোথায় বলুন? বিশেষ করে যারা কর্মজীবী এবং ‘ডেস্ক জব’ করে থাকেন তাদের জন্য তো সকালের হালকা ব্যায়াম ফরজ বলা যায়। হাঁটার পাশাপাশি সকালে একটু সময় নিয়ে হালকা কিছু ব্যায়াম শরীরকে চনমনে করে তুলবে।
ভোরে উঠে মেডিটেশন করতে পারলে মানসিক স্বস্তি পাবেন। তারপর ব্যায়াম করতে পারেন, যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু।
বিছানা থেকেই ব্যায়ামের প্রস্তুতি নিন। মনকে চিন্তামুক্ত রেখে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে শবাসনটা সেরে ফেলুন। সকালে ঘুম ভাঙলে লাফিয়ে বিছানা থেকে না উঠে কিছুক্ষণ শবাসন করুন। এতে শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। প্রতিদিন আধঘণ্টা শবাসন করলে মেরুদণ্ড ভালো থাকে, পরিশ্রম ও মানসিক চাপ কমে এবং সহ্য ক্ষমতা বাড়ে। এরপর করে নিন পবনমুক্তাসন। চিৎ হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে পেট ও বুকের ওপর রেখে দু’হাত দিয়ে চেপে ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ পর্যন্ত গণনা করুন। তারপর ডান পা নামিয়ে বিশ্রাম নিন। আসনটি দু’বার করতে হবে।
এরপরে পা দু’টি সোজা রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়–ন। দু’হাতের তালু উপুড় করে পাঁজরের কাছে দু’পাশে মেঝেতে রাখুন। এবার পা থেকে কোমর পর্যন্ত মেঝেতে রেখে হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে মাথা যতদূর সম্ভব ওপরে তুলুন। এখন মাথা সাধ্যমতো পিছন দিকে বাঁকিয়ে ওপরের দিকে তাকান। ২৫-৩০ সেকেন্ড শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এ অবস্থায় থাকুন। তারপর আস্তে আস্তে মাথা ও বুক নামিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েন। এরপরে বিছানা ছেড়ে সামান্য কিছু খেয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন জগিংয়ে।
সকালের হালকা ব্যায়ামের মধ্যে হাঁটা বা জগিং হলো সর্বোৎকৃষ্ট। শরীরচর্চা, হাঁটার সঙ্গে উপরি পাবেন ঝরঝরে তাজা বাতাস। সকালটা হয়ে উঠবে সতেজ। জগিংয়ের আগে খালি পেটে এক-দুই গ্লাস পানি খাওয়া যেতে পারে। ব্যায়ামের আগে বেশি কিছু খাবেন না। হালকা খাবার যেমন চিরতার রস অথবা ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ভালো। অথবা খেতে পারেন এক মগ চা। সামান্য কাঁচাছোলা খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাত নেড়ে জোরে হাঁটতে হবে। হাঁটার সঙ্গে বড় বড় নিঃশ্বাস ফুসফুসের ব্যায়ামের কাজ করে। নিঃশ্বাস নেয়ার সময় মুখ বন্ধ রাখবেন আর ছাড়ার সময় মুখ দিয়ে ছাড়বেন।
রাস্তায় হাঁটতে মাস্ক ব্যবহার করবেন। অন্যথায় এলার্জি বা অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। হাঁটার সময় খালি পায়ে হাঁটা বিপজ্জনক। এ ক্ষেত্রে স্পোর্টস স্যু পরতে পারেন। শরীরচর্চার পর তাড়াতাড়ি পোশাক বদলানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ঘাম শুকানোর আগে গোসল করবেন না। শরীর ঠাণ্ডা হলে গোসল করুন। হাঁটার ব্যায়ামের পাশাপাশি স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম ইত্যাদি করতে হবে। হাঁটার উপকারিতা পেতে স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম ইত্যাদি প্রয়োজন।
ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজের মধ্যে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করতে পারেন। ঘাড়, হাত-পায়ের জন্য উপযুক্ত বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ বেছে নিন। অফিসে একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজের ফাঁকেও কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। এর মধ্যে লেগ এক্সটেনশনের মতো ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ রয়েছে, যা নিয়মিত করুন। প্রত্যহ ১০ মিনিট হাত ঘুরিয়ে কপাল মালিশ করলে শারীরিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী পিটুইটারি গ্রন্থি সতেজ থাকে। প্রতি ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট অন্তর ডেস্ক ছেড়ে একটু হেঁটে আসুন।
শরীর ও মনের যে কোনো চাপের প্রথম শিকার হচ্ছে ঘাড়। কাজেই ঘাড় মালিশ করলে এবং মাথা ওপর-নিচ ও চারপাশে হেলিয়ে ঘোরালে ঘাড় নমনীয় থাকে। কনুইয়ের জোড়ায় হালকা চাপ দিয়ে এবং কনুই ও কব্জির মাঝখানে স্বাভাবিকভাবে মালিশ করলে হাত খুব সচল থাকে। পেটের ওপরে দু’হাত রেখে গভীরভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে পেট ফুলিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়লে ফুসফুসের শক্তি বাড়ে এবং দিনে অন্তত ২০ মিনিট এভাবে করলে রাতে ভালো ঘুম হয়।
সকালে হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা চলুন সবাই হাঁটি
আজকাল আমরা খুব ব্যস্ত।পড়াশুনা, চাকরি, ব্যবসা, ইত্যাদি কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত যে আমাদের নিজেদের দিকে, বিশেষ করে নিজেদের শরীরের দিকে খেয়াল রাখার কোনো প্রয়োজন মনে করি না। আমরা কাজের শেষে বা মাঝে গোগ্রাসে মজাদার সব খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে জীবনের আনন্দ খুঁজি। কিন্তু এর পরিণাম কি? হাঁ ওজন তো বাড়েই, সেই সাথে ভয়াবহ সব রোগ–ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ইত্যাদিও হতে পারে।
সকালে হাঁটার উপকারিতা:
হাঁটার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে-
১.হাঁটা রক্তচাপ কমায়
২.হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
৩.অতিরিক্ত মেদ কমায়
৪.রক্তের সুগার কমায়
৫.ওজন কমায় ও নিয়ন্ত্রণ করে
৬.ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, আন্থ্রাইটিস, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করে
৭.হার্টের সমস্যা,স্ট্রোক হবার ঝুঁকি কমায়
৮.হাঁড় শক্ত করে
৯.রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে
১০.ফলে হার্ট ভালো থাকে, শরীরের সামগ্রিক শক্তি বা ফিটনেস বাড়ে
১১.ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কমায়
১২.মাসেলের শক্তি বাড়ায়
১৩.হেলদি বিএম আই ধরে রাখে বা অর্জন করা যায়
১৪.হেলদি ওয়েস্ট টু হিপ রেসিও ধরে রাখে বা অর্জন করা যায়,
১৫.মেটাবলিজম বাড়ায়
১৬.শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে
১৭.তারুণ্য ধরে রাখে
১৮.আয়ু বাড়ায়
১৯.ব্রেইনের কার্যকারিতা বাড়ায়
২০.ভালো ঘুম হয়
২১.স্মরণ শক্তি বাড়ায়
২২.মন প্রফুল্ল রাখে, মানসিক অবসাদ দূর করে ও মন ভালো করে
২৩.মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
২৪.ভাল কলেষ্টেরল এইচডিএল বাড়ায় আর মন্দ কলেষ্টেরল এলডিএল কমায়
২৫.রক্ত নালীর দেয়ালে চর্বি জমতে দেয়না
২৬.হাঁটলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে
২৭.ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখে
২৮.হাঁটার ফলে পেশীর শক্তি বাড়ে
২৯.হাঁটা হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
৩০.শরীরের ওজন ঠিক থাকে আর শরীর থাকে ফিট
শুধু তাই নয় বিভিন্ন জটিল জটিল রোগের জন্য আলাদা আলাদা ব্যায়াম আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে হাঁপানির মতো জটিল রোগও কিন্তু বিশেষ ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে আরোগ্য হতে পারে।
আয়ু বাড়ে
প্রতিদিন সকালের মর্নিং ওয়ার্কের সময় বিশুদ্ধ বাতাস ও সুন্দর পরিবেশ আপনার হৃৎপিণ্ড ও মনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হাঁটার সময় হৃৎপিণ্ড শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করে। ফলে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ ও সচল থাকে এবং মানুষ দীর্ঘজীবী হয়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়ঃ
সকালে প্রতিদিন কিছুক্ষণ করে হাঁটলে ফুসফুসে তাজা বাতাস প্রবেশ করার সুযোগ পায়। এই বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে হৃৎপিণ্ড রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্কে সরবরাহ করে। ফলে মস্তিষ্ক সচল থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সকালে নিয়মিত হাঁটলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত সকালে হাঁটলে রক্তের লোহিত কণিকাগুলো থেকে চর্বি ঝরে যায়। এছাড়াও হাঁটার সময় রক্তের ইনসুলিন ও গ্লুকোজ ক্ষয় হয়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে।
ত্বক ভালো করেঃ
প্রতিদিন সকালে হাঁটলে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হয়। ফলে ত্বকের লোমকূপ গুলো খুলে যায় এবং শরীরের দূষিত পদার্থগুলো ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও লাবন্যময় দেখায়।
মেদ কমায়ঃ
নিয়মিত সকালে হাঁটলে মেদ ভুড়ির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাঁটলে প্রচুর ক্যালরি ক্ষয় হয়। ফলে নিয়মিত কম ক্যালরির খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটলে মেদ কমে এবং দেহের আকৃতি সুন্দর হয়।
দৃষ্টি শক্তি ভালো করেঃ
প্রতিদিন কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমাদের চোখের বারোটা বেজে যাচ্ছে। চোখকে কিছুটা আরাম দিতে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে হাঁটার বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে যে সকালে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।
সকালে হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা চলুন সবাই হাঁটি
মানসিক চাপ কমায়ঃ
প্রতিদিন হাঁটতে বেড়িয়ে সকালের সুন্দর স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে কার না ভালো লাগে বলুন! প্রতিদিন সকালের সুন্দর পরিবেশ ও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি আপনার মন ভালো করে দিতে পারে নিমিষেই। প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হেটে আসলে সারাদিন কাজের উৎসাহ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
প্রতিদিন সকালে হাঁটলে শরীরের প্রতিটি কোষে বিশুদ্ধ রক্ত এবং অক্সিজেন পৌঁছে যায়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সহজেই অসুখে পরার প্রবণতা কমে।
সবচেয়ে সহজ, সস্তা, জনপ্রিয় এবং নিরাপদ ব্যায়ামঃ
একটি সুখী, সুস্থ শরীর ও মনের জন্য কোনো না-কোনো ধরনের শরীরচর্চা প্রয়োজন। ব্যায়াম এবং সেই সঙ্গে সুমিত পানাহার হলো দীর্ঘজীবনের রহস্য, শরীর-মন তরতাজা রাখার রহস্য। আদর্শ ওজন বজায় রাখা সবচেয়ে বড় কাজ।এ ছাড়া আলসে কালক্ষেপণের একটি ভালো উপায় হলো ব্যায়াম করা।সবচেয়ে সহজ, সস্তা, জনপ্রিয় এবং নিরাপদ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। এটি কম পরিশ্রমে উপযুক্ত একটি ব্যায়াম সব বয়সের মানুষের জন্য।
গবেষকদের কথাঃ
ইদানীং গবেষকেরা বলছেন, হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটা, জগিং ও দৌড়ানো সমান সুফল আনে। বস্তুত কারও কারও জন্য হাঁটা এর চেয়েও ভালো ব্যায়াম। কারণ, হাঁটলে শরীরের ওপর চাপ পড়ে না। দৌড়ালে অনেক সময় হাড়ের গিঁটে ব্যথা হয়, আহত হয় পেশি। এটা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু হাঁটাহাঁটি করে আহত হওয়ার কথা শোনা যায় না।
হাঁটা বনাম অন্যান্য ব্যায়ামঃ
বড় সহজ এই হাঁটা। বিশেষ কোনো পোশাক পরার দরকার নেই। ঘেমে-নেয়ে ওঠার প্রয়োজন নেই। আরাম-আয়েশেও হাঁটা যায় যত্রতত্র। সপ্তাহে ছয় দিন ৩০ মিনিট জোরে হাঁটাই যথেষ্ট। জগিং ও অ্যারোবিকসের মতো কঠোর ব্যায়াম হার্টকে ঘোড়ার মতো দৌড়াতে বাধ্য করে—রক্ত জোরে পাম্প করতে থাকে।একপর্যায়ে এটি হিতকরী। তবে পেশি যেহেতু এত কঠোর পরিশ্রম করে, সে জন্য এর প্রয়োজন হয় প্রচুর অক্সিজেন। ব্যায়ামে তৈরি হয় ল্যাকটিক এসিড। অম্লতা রোধের জন্য চাই প্রচেষ্টা। ল্যাকটিক এসিড জমা হওয়ায় পেশি হয় শক্ত ও বেদনার্ত।
কিন্তু হাঁটলে হৃৎপিণ্ড জোরে পাম্প করে, বাড়ায় রক্তপ্রবাহ। তবে পেশির ওপর এত কঠোর প্রভাব ফেলে না। শরীরে তৈরি হয় না ল্যাকটিক এসিড।তাই শরীরের ওপর কম চাপ প্রয়োগ করেও রক্ত সংবহনতন্ত্রের উজ্জীবনে সাহায্য করে। দেহের সঞ্চিত মেদ অবমুক্ত হয়ে বিপাক হয়।শরীরের ওপর যেহেতু এর চাপ কম, সে জন্য যে কেউ পুরো সপ্তাহ হাঁটলেও খারাপ লাগে না।
অনেক অসুস্থ মানুষও এই হাঁটাকে ব্যায়াম হিসেবে নিতে পারেন। শুরু হোক ধীরে ধীরে। প্রথম দিন ১০-১৫ মিনিট। এরপর গতি বাড়ান, সময় বাড়ান। ২০-৩০ মিনিট। এরপর শীতল হন ১০ মিনিট। পাঁচ-১০ মিনিট ধীরে হেঁটে শীতল হন। ব্যয়বহুল জিম থেকে নিখরচায় হাঁটা অনেক ভালো।
শুধু কি ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, হৃদরোগ হলেই হাঁটব?
নিয়মিত হাঁটাকে রোগ প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসাবে মনে করে সুস্থ অবস্থা থেকেই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ। অথচ আমরা হাঁটি তখনই, যখন ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, হৃদরোগ ইত্যাদি অসুখ ধরা পড়ে এবং ডাক্তার সাহেব বলেন যে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে হাঁটতে হবে, তখন আমরা হাঁটি। পারলে দৌড়ানোর চেষ্টা করি।কিন্তু অসুখ হলেই হাঁটব এটা ঠিক নয়।সব সুস্থ মানুষের সুস্থতাকে ধরে রাখার জন্য হাঁটা আবশ্যক।
সকালে হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা চলুন সবাই হাঁটি।
কতক্ষন এবং কতদিন হাঁটবেন?
হাঁটার উপকার পেতে অবশ্যই নিয়মিত এবং সপ্তাহে অন্তত চার বা পাঁচ দিন হাঁটতে হবে, তবে সপ্তাহে সাত দিন হাঁটতে পারলে তা হবে সোনায় সোহাগা। হাঁটতে হবে ৩০/৪০ থেকে ৬০ মিনিট ধরে। প্রতিদিন তিরিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা হাঁটলে মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারসহ অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি তিরিশ থেকে ষাট শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা যায়।
সপ্তাহে ৪/৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট দ্রুত হাটলেই আপনার জীবনের অনেক উন্নতি হবে। যারা ব্যায়াম করেন না, তারা কিছুদিন হাটলেই বুঝবেন এর কত উপকারিতা, শরীরটা কত ঝরঝরে মনে হচ্ছে।বরযাত্রীর হাঁটা হাঁটলে কিন্তু হবে না। হাঁটতে হবে যথেষ্ট দ্রুত যেন শরীর থেকে ঘাম বের হয়। আপনি দৈনিক যত বেশি হাঁটবেন, মনে হবে আপনি ততই বেশি ভাল আছেন। ভাল থাকার ব্যাপারে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
কখন হাঁটবেন ?
হাঁটা হাঁটির সর্বোত্তম সময় হচ্ছে ভোর বেলা, যারা নামাজ পড়েন তাদের জন্য ফজরের নামাজের পর। এসময় গাড়ি ঘোড়া এবং কল কারখানা বেশী না চলার কারণে ভোরের বাতাস থাকে অনেকটা নির্মল। সকালে যাদের সম্ভব নয় তারা তাদের সুবিধা মতো যে কোন একটা সময় নির্ধারণ করে নিতে পারেন, তবে দুপুরের ভরা রোদে মোটেই নয়।
তবে আপনার সুবিধামত সময়ে হাঁটতে পারেন। তবে শরীরের কথা চিন্তা করলে বিকালে হাঁটা সবচেয়ে ভালো। কারণ তখন মাসেল ফ্লেক্সিবল থাকে।শরীরের তাপমাত্রা সকালের চাইতে বেশি থাকে। তখন সব কাজ শেষ করে টেনশন মুক্ত হয়ে হাঁটা যায়।কিন্তু সকালে হাঁটলে মাসেল ও জোড়া শক্ত হয়ে থাকে। আবার শরীরও ওয়ার্ম আপ হতে সময় বেশি লাগে। সে কথা চিন্তা করলে বিকালে হাঁটা উত্তম। কিন্তু বিকালে পরিবেশ দূষণ বেশি থাকে এটাও সমস্যা। সকালে দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটা যায়। তবে আপনি যখনি সময় পান সুবিধা মত সময়ে হেটে নিবেন। চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটতে।
কোথায় হাঁটবেন ?
চেষ্টা করুন সুন্দর, দূষণ মুক্ত পরিবেশে হাঁটতে। হাঁটার জায়গা যেন সমতল ও পরিষ্কার হয় তা লক্ষ্য রাখুন। বাড়ির বাগান, পার্কে, পরিষ্কার ফুটপাতে বা যেকোনো খোলা জায়গায় হাঁটতে পারেন। মাঝে মাঝে হাঁটার রাস্তা বা জায়গা বদল করুন। এতে একঘেয়েমি কাঁটবে।
হাঁটার সময় অন্যান্য কাজঃ
আপনি ইচ্ছে করলে হাঁটার সময়টুকুতে পরিকল্পিত ভাবে অন্যান্য কাজও সেরে নিতে পারেন। যারা লেখালেখি করেন তারা হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বিভিন্ন টপিক্স নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। মোবাইলে রেকর্ডিং করে কুরআন, লেকচার আবং পছন্দের গান এবং আরো যা কিছু চান শুনতে শুনতে হাঁটতে পারেন। যে কাজটি করা সম্পূর্ণ নিষেধ তা হলো টেনশন। সর্বাবস্থায় টেনশন মুক্ত থাকতে হবে।
নতুন যারাঃ
যারা নতুন ব্যায়াম বা হাঁটা হাঁটি শুরু করবেন তারা প্রথম দিন বেশী বেশী হাঁটবেন না। আপনার আশপাশে কাউকে খুব দ্রুত হাঁটতে দেখে আপনিও প্রতিযোগীতা বা যোশে পড়ে অতিরিক্ত করলেন তো সমস্যায় পড়লেন। এভাবে করতে গেলে হঠাৎ মাংশ পেশীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে শরীর ব্যাথাতুর হয়ে যেতে পারে। তাই সাধারণ গতিতে প্রথম দিন ১৫/২০ মিনিট তার পর থেকে একটু একটু বাড়িয়ে এক ঘন্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় একটু আনইজি এবং আলসেমি লাগতে পারে। ধৈর্য্য ধারণ করে মাস খানেক চালিয়ে নিতে পারলে অভ্যাসে পরিণত হবে এবং তখন না হাঁটলেই আনইজি লাগবে।
খালি পায়ে হাটাঃঃ
ছবিঃখালি পায়ে হাটা |
খালি পায়ে হাটা ও দৌড়ানো অনেক ক্ষেত্রেই জুতা পরে হাটার চেয়ে বেশি উপকারী। পায়ের বেশ কিছু রোগের জন্য আমেরিকার বিশেষজ্ঞ দল জুতা পরে হাটাকেই দায়ী করেছেন। যখন আপনি হিলওয়ালা জুতা পরে দ্রুত দৌড়ান তখন পায়ের একটি অংশে শরীরের সম্পূর্ণ ভর দেওয়া হয়, এবং অন্য অংশে কোন চাপ পরে না। এবং যদি খালি পায়ে হাটা হয় তখন সম্পূর্ণ পায়ে-ই একটা ভারসাম্য বজায় থাকে।এজন্য অবশ্য এমন ধরনের জুতা বানানো যেতে পারে যার মাধ্যমে পায়ের স্বাভাবিকতা বজায় থাকবে এবং পায়ের সাধারণ চরাফেরায় ব্যঘাত হবে না।