জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে? Tunes71.com

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

প্রযুক্তি বিশ্বের তাক লাগানো এক আবিষ্কার, জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম এর নাম হয়তবা আপনি এরমধ্যেই শুনেছেন। বিশ্বজনীন অবস্থান-নির্ণায়ক ব্যবস্থা, যাকে মূল ইংরেজিতে Global Positioning System (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ও সংক্ষেপে GPS (জিপিএস) নামে ডাকা হয়।



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে উদ্ভাবিত একটি প্রযুক্তি।প্রথম দিকে এর প্রয়োগ ছিল পুরোপুরি সামরিক। পরে জনসাধারণের নিমিত্তে এর ব্যবহার উন্মুক্ত করা হয়। 

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

এটি একটি কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেকোন আবহাওয়াতে পৃথিবী যেকোনো চলমান অবস্থান আর সময়ের তথ্য সরবরাহ করাটা এর মূল কাজ। জিপিএস এক ধরনের একমুখী ব্যবস্থা কারণ ব্যবহারকারীগণ উপগ্রহ প্রেরিত সঙ্কেত শুধুমাত্র গ্রহণ করতে পারে।

জিপিএস প্রযুক্তি কি? 

একটি কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেকোনো আবহাওয়াতে সময়ের সাথে পৃথিবীর যেকোনো স্থির বা চলমান বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা এর প্রধান কাজ। জিপিএস এক ধরনের একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা, এর ব্যবহারকারীরা উপগ্রহ থেকে পাঠানো সঙ্কেত শুধুমাত্র গ্রহণ করতে পারে কিন্তু নিজেরা উপগ্রহে সঙ্কেত পাঠাতে পারে না। আবিষ্কারের পরে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও সামরিক পরিদপ্তর ধাপেধাপে এর উন্নয়ন ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?


মার্কিনীরা ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট নেটওয়ার্ককে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ব্যবহারযোগ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম হিসেবে ঘোষণা করে। আমেরিকার হাওয়াইতে স্থাপিত স্যাটেলাইট ট্রেকিং ষ্টেশন থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী এই স্যাটেলাইটগুলোর নিয়ন্ত্রন করে থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় বিশ হাজার উচ্চতায় এইসব স্যাটেলাইট ৬টি অরবিটে দিনে দুবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে।

জিপিএস (GPS) কিভাবে কাজ করে?

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

পৃথিবী ও স্যাটেলাইটের ঘুর্ণায়মান অবস্থায় একটি জিপিএস রিসিভার বা গ্রাহক কিভাবে নিকটস্থ কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে যোগাযোগ করে তার দৃশ্য।
জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

ছয়টি অরবিট এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে যে কোন সময় কমপক্ষে চারটি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হয় সাধারনভাবে। স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়ত দুধরনের সংকেত প্রেরণ করছে যেমন L1 ও L2। L1 হচ্ছে বেসামরিক ব্যবহারের জন্য, যার ফ্রিকোয়েন্সী ১৫৭৫.৪২ মেগাহার্জ। এই সংকেতের জন্য প্রয়োজন লাইন অফ সাইট। অর্থাৎ যোগাযোগের সময় স্যাটেলাইট ও রিসিভারের মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে । স্যটেলাইট থেকে সংকেতগুলো আসে আলোর গতিতে, প্রতিটি সংকেতে এর সেন্ডিং টাইম লেখা থাকে।

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?


এই সংকেত গুলো গ্রহন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় জিপিএস রিসিভারের মাধ্যমে। জিপিএস রিসিভারে আসা সংকেতটির রিসিভিং টাইম থেকে সেন্ডিং টাইম বিয়োগ করে সিগন্যালের রানটাইম নির্ণয় করা হয়। রানটাইমকে তিন লক্ষ দিয়ে গুণ করলে রিসিভার থেকে স্যাটেলাইটটির দুরত্ব জানা যায়। এভাবে চারটি স্যাটেলাইটের দূরত্ব নির্ণয় করে রিসিভার প্রতিটি স্যাটেলাইটের পজিশনকে কেন্দ্র করে, প্রতিটির দূরত্বকে এর ব্যাসার্ধ বিবেচনা করে চারটি ত্রিমাত্রিক বৃত্ত আকা হয়।

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

আদিকালে মানচিত্র, কম্পাস, স্কেল ইত্যাদি দিয়ে মেপে ও অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের কোন বস্তু বা স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা হত।


জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

 এইসব পদ্ধতি খুব নিখুঁত ছিল না স্বাভাবিকভাবেই। বর্তমানে জিপিএসের মাধ্যমে চমৎকারভাবে আগেরকার খুঁতগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

জিপিএস প্রযুক্তি আবিস্কারের ইতিহাসঃ

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

মার্কিন সামরিক বাহিনী তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে জিপিএস প্রযুক্তির প্রাথমিক কাজ শুরু করে ১৯৭৭ সালে। এরপর ধাপে ধাপে এর উন্নয়ন ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট নেটওয়ার্ককে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ব্যবহারযোগ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম হিসেবে ঘোষণা করে। সেইসাথে সিস্টেমটি বিশ্বের বেসরকারী লোকদের ব্যবহারের জন্যও উম্মুক্ত করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে অবস্থিত স্যাটেলাইট ট্রেকিং স্টেশন থেকে US Military স্যাটেলাইটগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করে।

ডিজিটাল ম্যাপিংঃ

এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে সংগৃহীত ডেটাকে কম্পাইল (প্রনয়ণ) করে ফরম্যাটেড (নির্দিষ্ট বিন্যাস) ভার্চুয়াল চিত্র-সংকলন সাধিত হয়। এই প্রযুক্তির প্রাথমিক কাজ হ'ল, মানচিত্র তৈরি করা যার সাহায্যে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঠিক উপস্থাপনা করা যায়। তাতে বিশদভাবে বর্ণনা করা থাকে, সেখানের প্রধান সড়ক-জাল এবং আগ্রহের অন্যান্য বিষয়বস্তুগুলি। এই প্রযুক্তি, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গার দূরত্ব গণনা করার সুযোগ দেয়।

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

যদিও ডিজিটাল ম্যাপিং বিভিন্ন কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে পাওয়া যায়, তবুও এই মানচিত্রগুলির মূল ব্যবহার হয় গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম, বা জিপিএস স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কে, ব্যবহৃত হয় স্ট্যান্ডার্ড অটোমোটিভ নেভিগেশন সিস্টেম-এ।

GPS রিসিভার কি?

GPS রিসিভার সংকেতটির reciving time থেকে sending time বিয়োগ করে runtime বের করে। runtime দিয়ে ৩০০০০০ কে গুণ করলে রিসিভার থেকে স্যাটেলাইটটির দুরত্ব বের হয়। এভাবে চারটি স্যাটেলাইটের দূরত্ব বের করে রিসিভার প্রতিটি স্যাটেলাইটের পজিশনকে কেন্দ্রবিন্দু করে প্রতিটির দূরত্বকে ব্যাসার্ধ ধরে চারটি ত্রিমাত্রিক বৃত্ত (sphere) অঙ্কন করে। তারপর বৃত্তগুলোর Intersection point দিয়ে 3-D Trilateration ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে পজিশন নির্ণয় করে। ত্রিমাত্রিক পদ্ধতিতে গোলক (sphere) সৃষ্টি করে Trilateration ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে সঠিক ফলাফলের জন্য কমপক্ষে চারটি স্যাটেলাইটের তথ্য প্রয়োজন হয়। অনেকসময় ৪র্থ স্যাটেলাইটের পরিবর্তে পৃথিবীর পরিধিকে ৪র্থ বৃত্ত হিসেবে ধরেও হিসাব করা হয়।

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?


GPS সিস্টেমে সময় মাপের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১ লক্ষ ভাগের ১ সেকেন্ড = ৩ কিলোমিটার। এত ক্ষুদ্র সময় মাপতে পারে ব্যয়বহুল Atomic clock (accuracy ন্যানোসেকেন্ড) যা স্যাটেলাইটের আছে কিন্তু রিসিভারের নাই। রিসিভার স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত pseudo-random code কে synchronize করে নিজের ঘড়িকে আপ-টু-ডেট করে নেয়, অর্থাৎ স্যাটেলাইট ও রিসিভার উভয়ের ঘড়ির কারেন্ট টাইম একই হয়ে যায়। সাধারণ মানের GPS রিসিভার (±10m) সঠিক পজিশন দেখাতে পারে। Global Positioning System এর higher accuracy-র (±1m) জন্য ব্যবহার হয় Differential GPS। এই সিস্টেমে মহাশূন্যের স্যাটেলাইট ছাড়াও ল্যান্ড স্যাটেলাইট থেকেও তথ্য নেওয়া হয়। জিপিএস সফটওয়্যারে (জিপিএস ম্যাপ) রাস্তাঘাট ছাড়াও পেট্রোল পাম্প, পুলিশ স্টেশন, হোটেল/রেস্টুরেন্ট, পর্যটন স্থান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ইত্যাদির তথ্য থাকে। কারেন্ট পজিশনের আশেপাশে উল্লিখিত কোন কিছু থাকলে জিপিএস ডিভাইসের ডিসপ্লেতে তা প্রদর্শন করে। গাড়ি, জাহাজ, প্লেন ছাড়াও বড় বড় শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে, যুদ্ধে শত্রুসেনার ট্রেকিং রাখতে, বোমা-মিসাইলের নিশানাকে সঠিক করতে, কোন বিশেষ স্থানের উপর নজর রাখতে GPS সিস্টেম ব্যবহার হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের GPS-র বিকল্প হিসেবে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন তৈরি করছে global navigation satellite system (GNSS)। যাকে বলা হয় Galileo। এটি ২০১৩ সাল থেকে চালু করা হবে। GLONASS নামে রাশিয়ার নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম আছে যা মহাশূন্য গবেষণা ও সামরিক কাজে ব্যবহার হয়। চীনও Beidou-2 নামে তাদের নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম তৈরির প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।

সাধারণ ধারণাঃ

GPS প্রযুক্তির বেসিক কনসেপ্ট সর্বসাধারণের বুঝার সুবিধার্থে একটি উদাহরণ তুলে ধরলাম: মনে করুন আপনি বাংলাদেশের কোন জায়গায় হারিয়ে গেলেন। আপনি জানেন না জায়গাটির নাম কী, আপনি জানেন না আপনার আশেপাশে কোন শহর বা লোকালয় আছে কিনা! আপনি ঠিক করতে পারছেন না কোনদিকে যাবেন! এসময় (A) নামে একটা লোকের দেখা পেলেন তারও একই অবস্থা, পথ হারিয়ে ফেলেছে। তবে তার কাছে বাংলাদেশের একটা মানচিত্র আছে কিন্তু তা কোন কাজে আসছে না। কারণ আপনারা কোন জায়গায় আছেন তা জানলেই তো মানচিত্র দেখে আশেপাশের শহর কোনটি, কোনদিকে যেতে হবে, কতদূর যেতে হবে ইত্যাদি জানা যাবে।

জিপিএস (GPS) কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

এসময় X, Y, Z নামে তিনজন লোকের দেখা পেলেন। X বললেন আপনারা ঢাকা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে আছেন, কিন্তু ঢাকার কোনদিকে (উ:, দ:, পূ: প: ) আছেন তা বলেনি। (A) তার মানচিত্রে ঢাকাকে কেন্দ্রবিব্দু ধরে ১১০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ (মানচিত্রের স্কেলে) ধরে একটি বৃত্ত আকঁল । অর্থাৎ যেসব জায়গার উপর দিয়ে বৃত্তের পরিধিটি গেছে সেসব জায়গার কোন একটিতে আপনারা আছেন।

Y বললেন আপনারা রংপুর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে আছেন, কিন্তু কোনদিকে (উ:, দ:, পূ: প: ) আছেন তা বলেনি। (A) তার মানচিত্রে রংপুরকে কেন্দ্রবিব্দু ধরে ১৫০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ (মানচিত্রের স্কেলে) ধরে একটি বৃত্ত আকঁল। অর্থাৎ যেসব জায়গার উপর দিয়ে বৃত্তের পরিধিটি গেছে সেসব জায়গার কোন একটিতে আপনারা আছেন। কিন্তু একই সাথে X ও Yএর তথ্যকে সঠিক হিসেবে নিলে আপনাদের অবস্থান গোপালপুর অথবা ময়মনসিংহে। কারণ বৃত্ত দুটি পরস্পরকে এ দুটি জায়গায় ছেদ করেছে। গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাবে শুধুমাত্র এ দুটি জায়গা থেকেই ঢাকার দুরত্ব ১১০ ও রংপুরের দুরত্ব ১৫০ কিলোমিটার।

Z বললেন আপনারা সিলেট থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে আছেন। (A) তার মানচিত্রে সিলেটকে কেন্দ্রবিব্দু ধরে ১৪০ কিলোমিটারকে ব্যাসার্ধ (মানচিত্রের স্কেলে) ধরে একটি বৃত্ত আকঁল। অর্থাৎ যেসব জায়গার উপর দিয়ে বৃত্তের পরিধিটি গেছে সেসব জায়গার কোন একটিতে আপনারা আছেন। উল্লিখিত নিয়মে আমরা দেখতে পাচ্ছি বৃত্ত তিনটি পরস্পরকে শুধু একটি বিন্দুতে ছেদ করেছে, সেটি হল ময়মনসিংহ! অর্থাৎ তিনটি বৃত্তের Intersection point (ময়মনসিংহ) থেকে X, Y এবং Z তিনজনের তথ্যই সঠিক। এভাবেই আপনারা জানলেন আপনাদের অবস্থান ময়মনসিংহে।

এখন আমরা বলতে পারি: X, Y এবং Z নামের তিনটি স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত বিশেষ তথ্য A নামের GPS রিসিভার গ্রহণ করে গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাবের মাধ্যমে ডিজিটাল মানচিত্রে আপনার বর্তমান অবস্থানটি (Position) উল্লেখ করার যে পদ্ধতি/প্রযুক্তি তার পূর্ণনাম Global Positioning System বা সংক্ষেপে GPS।







Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url