হার না মানা সফলতার গল্প - মাইকেল ফেলপস
হার না মানা সফলতার গল্প
আপনাকে যদি এখন প্রশ্ন করা হয় – আপনি কি সফল? উত্তরে আপনি কি বলবেন এই একটি প্রশ্নের উত্তরে যেমন অনেক মানুষই বলবে – ভাই “সফলতা!” সেইটা আবার কি।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি,বাঁচার জন্য যেমন অক্সিজেন লাগে, ঠিক তেমনি মানসিক প্রশান্তির জন্যও “সফলতা” লাগে। তাই জীবনে সফলতা পেতে মানুষ সবকিছুই করে। শুধুমাত্র সফলতা নামক অমৃতের ছোয়া পেতে মানুষ পুরো পৃথিবী চষে বেড়ায়। যদি সফলতা আপনার কাছে এলিয়েন দ্বারা তৈরি করা কোন শব্দ মনে হয় তবে এই গল্পটি আপনার জন্যই একদম পারফেক্ট।
এই পৃথিবী সবার জন্য একরকম নয়। কেউ শত চেষ্টা করেও সফলতার ধারেকাছে যেতে পারেনা। আবার সফলতার জন্য কেউ এভারেষ্ট জয় করে ফেলে। ঠিক এমনই একজন জীবনযুদ্ধের লড়াকু মাইকেল ফেলপস।
এই নামের মানুষটির নাম শুনেন নাই এমন কেউই নেই।তিনি সর্বকালের সেরা সাঁতারু।মনিষিরা যাকে নাম দিয়েছে জলদানব। সফলতার এক অনন্য নাম মাইকেল ফেলপস । যিনি জীবনের অনেক উত্থান পতনের পরও হার মেনে না নিয়ে সফলতার ক্ষিদে মিটিয়েছেন।
অসাধারন অনুপ্ররনা মাইকেল ফেলপস-
চারটি অলিম্পিক শেষ করে ২৮টি পদক জয়ী এক আমেরিকান হলেন মাইকেল ফেলপস। অবাক হয়ে যাবেন এই ২৮টি পদকের ২৩টিই স্বর্ণপদক। নিশ্চয় আপনি চিন্তা করছেন এ আর এমন কি। তাহলে চলুন এবার একটা পরিসংখ্যান তৈরী করা যাক....
বাংলাদেশ আদৈৗ অলিম্পিকে কোনপ্রকার পদক অর্জন করতে পারেনি। প্রতিবেশি দেশ ভারতের দিকে নজর দেই একটু। ভারত এখন পর্যন্ত ৫৭ বছর অলিম্পিক খেলে সবমিলিয়ে পদক এনে দিয়েছে ২৮ টি। যেটি মাইকেল ফেলপস এনেছে মাত্র ৪টি অলিম্পিকে অংশগ্রহন করে। শুধু এটুকুই নয় ফেলপস তার খেলোয়াড়ী জীবনে এতো পদক এনে দিয়েছেন যে, ইতিহাসে কোন দেশের হয়ে এতো পদক আনার রেকর্ড এটি।
তিনি তার সাঁতার জীবন শুরু করেন রেকর্ড ভেঙ্গে। মাত্র ১০ বছর বয়সে সাঁতারে িতনি আমেরিকার জাতীয় রেকর্ড ভাঙ্গেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি আবারও নিজের রেকর্ড ভেঙে দেন।মাত্র ১৫ বছর বয়সে আমেরিকার সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু হিসেবে অলিম্পিকে অংশগ্রহন করেন।
তিনি আরো একবার জাতীয় রেকর্ড ভাঙ্গেন ১৯ বছর বয়সে । তারপর দ্যিমাইকেল রেকর্ড ফেলপস ২০০৪, ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৬ সালের সাঁতারে ২৮ টি স্বর্ণ অর্জন করেন। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকের সময় তার একনিষ্ঠ অনুশীলন দেখে সবাই তখন হাসাহাসি করতে থাকে।কিন্তু রেকর্ড বয় সেদিকে কোনো কান না দিয়ে একটানা অনুশীলন করতে থাকেন।তিনি সেই অলিম্পিকেই বিখ্যাত মার্কিন সাঁতারু মার্ক স্পিটজ এর ৮ টি স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড ভাঙেন।
সংকটময় সময় কীভাবে পাড়ি দিয়েছেন
কিন্তু কথায় আছে – অধিক সুখ মনুষত্বের জন্য হানীকারক। ফেলপসের ক্ষেত্রেও একই কথা একদম প্রযোজ্য ছিল। অতিরিক্ত অর্থলাভে ড্রাগস,নারী কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। এর জন্য তাকে জেলেও যেতে হয়েছে।সাঁতারু মার্কিন ফেডারেশন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, এমনকি ২০১২ সালের অলিম্পিকে যোগ দিতে পারেননি।
এতো সংকটের মধ্যেও ২০১৪ সালে তিনি মমতাময়ী মা এবং কোচের অনুপ্ররণায় ফিরে আসেন নতুন উদ্যমে নতুন গতিতে।তিনি ২০১৬ সালের অলিম্পিকে ৫টি স্বর্ণপদক অর্জন করেন। তার ২৩ টি স্বর্ণপদক অর্জন অলিম্পিকের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একক স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ড।
এতো রেকর্ড তিনি কিভাবে ভাঙ্গেন?
ফেলপস একবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন – মানুষ অসাধারণ কীর্তিত্ব তৈরি করতে পারে, শুধু মানসিক শক্তি থাকলেই হয়।
“শুধুমাত্র অনুশীলনই পারে একজন মানুষকে উন্নতির সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে” কথাটির পরিপূর্ন উদাহরণ বলা যায় মাইকেল ফেলপসকে। তার এতো সব রেকর্ড ভাঙ্গার পেছনে ইচ্ছা শক্তি থাকার পাশাপাশিও ছিল গভীর অনুশীলন।ছোটবেলা থেকেই তার এতটাই আত্মবিশ্বাস ছি্লো যে, প্রত্যেক রেকর্ড করার পর তিনি খাতা কলম নিয়ে বসতেন এবং পরের রেকর্ড কীভাবে অতিক্রম করবেন, সে ব্যাপারে পরবর্তী প্রস্তুতি নিতেন।
জেনে রাখা দরকার:
ফেলপসের কঠোর অনুশীলনের ও পরিশ্রমের একটি দৃষ্টান্তের কথা না বললেই নয়।ফেলপস ২০০৪ সালে যখন বললেন, তিনি মার্ক স্পিটজের ৭টি স্বর্ণের রেকর্ড ভাঙ্গবেন, তখন অনেকেই বিষয়টিকে মজা হিসেবে নিয়েছিলেন। কিন্তু ফেলপস পড়াশোনা শুরু করলেন,কঠোর পরিশ্রমের এই রেকর্ড গড়ার পথে মার্ক কীভাবে অনুশীলন করেছিলেন। তিনি দেখলেন, মার্ক প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘন্টা কঠোর পরিশ্রম করতেন।
এবার মাইকেল ফেলপস সিন্ধান্ত নিলেন, তিনি আগামী চার বছর প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে অনুশীলন করবেন। যার মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ১০০ কিলোমিটার, প্রতিদিন ১৫ কিলোমিটার এবং ৫০ সেকেন্ডে ১০০ মিটার অতিক্রম করার চমক লাগানো অনুশীলন করবেন। এভাবেই চার বছর কঠোর অনুশীলন করার পর বেইজিং অলিম্পিকে ৮টি স্বর্ণ জয় করলেন আর পৃথিবীকে জানিয়ে দিলেন এক অবিস্মরনীয় সত্য কথা, মানুষের জন্মই হয়েছে মূলত অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য।
মাইকেল ফেলপসের এমন সফলতার গল্পে বুজিয়ে দিয়েছেন “সফলতা” কোন এলিয়েন দ্বারা সৃষ্ট ভাষা নয়। কষ্টকে অনুপ্রেরণায় রূপান্তরিত করলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। সফলতা পেতে হলে লাগে অবিরাম অনুশীলন আর প্রবল ইচ্ছা শক্তি ।
আরো পড়ুনঃ